বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে তা বৈধ বা সাদা করার সুযোগ চাওয়াকে সমর্থন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এবারের বাজেটে অনেক কিছু আছে, আবার অনেক কিছু নেই।’
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘বন্ডের পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও যাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করব। আমরা বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে।’
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতির জন্য কেউ না কেউ দায়ী। এসব দায়ী ব্যক্তিকে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।
মুস্তফা কামাল বলেন, পাশাপাশি এমন ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত, যেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন। বাড়িতে আগুন লাগলে এর কারণ না খুঁজে, বরং আগে আগুন নেভানো প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারব। বাজার তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’ বাজার তার নিজস্ব গতিতে চললে, মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি অনেকাংশে পুষিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজার নিয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরামর্শ পেয়েছি, তাঁদের বেশ কিছু চাওয়া আছে। এই চাওয়া ও পরামর্শগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে।’ সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে নিষ্ক্রিয় থাকায় এই বাজারে তারল্য-সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাজেটের পরই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাংসদ আশরাফ আলী, সাংসদ এম এ মান্নান, সাংসদ ফরিদা রহমান, সাংসদ আবদুর রহমান, ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসানুল ইসলামসহ উচ্চপর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ: এদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির পেছনে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দায়ী। তাই তাঁদের জনতার আদালতে বিচার হওয়া উচিত।
গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাজেটে পুঁজিবাজার-বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশীদ চৌধুরী।
পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতা ফেরাতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ১৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: অবিলম্বে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা; বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থ উপদেষ্টা ও ডিএসইর সভাপতিকে অপসারণ; বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত এসএলআর ও সিআরআর হার কমানো।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবদুর রাজ্জাক, সদস্য-সচিব জাহাঙ্গীর আলম, শাহাদাত উল্লাহ ফিরোজ, ফয়সাল আহমেদ, সাজ্জাদুল হক প্রমুখ।
বাজার পরিস্থিতি: গতকাল ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৪৯ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৭৪৫ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ২০৩টির, কমেছে ৪৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে আটটি প্রতিষ্ঠানের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জে ৪৫৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১১৫ কোটি টাকা বেশি।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ১৬৪ দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে হাতবদল হওয়া ১৮৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১৪৭টির, কমেছে ৩২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৫৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ কোটি টাকা বেশি।
News Source: Prothom-alo
Stock News 24
Fresh from BPL T20 Cricket
Wednesday, 22 June 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment