Stock News 24

Fresh from BPL T20 Cricket

Sunday 19 June 2011

সরকারি ২১ কম্পানি এখন শেষ ভরসা

চার মাস স্থগিত থাকার পর আবারও জোরালো হচ্ছে পুঁজিবাজারে সরকারি কম্পানির শেয়ার ছাড়ার দাবি। বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্টক এঙ্চেঞ্জের নেতারাসহ বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ দাবি করেছেন।
ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের সভাপতি শাকিল রিজভী এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, শেয়ারবাজারের অস্থিরতা কাটাতে চাহিদার সঙ্গে জোগানের ভারসাম্য থাকা জরুরি। বর্তমানে একটু একটু করে বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে। এ সময় সরকারি শেয়ার ছাড়ার প্রয়োজনীয়তা আবার দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাজার যখন অতিমূল্যায়িত হয়েছিল, সে সময় সরকারি শেয়ার ছাড়লে এ ধরনের বিপর্যয় হতো না।
চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, এখন আবার সরকারি শেয়ার বাজারে আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, দাম কমানোর পর মবিল-যমুনার শেয়ার বাজারে আসছে। আর পদ্মা অয়েল ও ওয়েস্টিনের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন জানে।
সরকারি শেয়ার ছাড়ার প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারের যে পরিস্থিতি, তাতে সরকারি কম্পানির শেয়ার ছাড়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদি গত বছর ডিসেম্বরের আগেই শেয়ারগুলো আনা হতো, তাহলে বাজারের পতন এত তীব্র হতো না। অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারগুলোর দাম মৌল ভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পর্যায়ে এসেছে। ফলে এখন সরকারি কম্পানির শেয়ার ছাড়া যায়। আশা করেছিলাম, এবার বাজেটে এ ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা থাকবে।'
উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি আন্তমন্ত্রণালয় সভায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আটটি কম্পানির শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব শেয়ার ছাড়া শুরু হবে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা শেষ হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তালিকাভুক্ত নয় এমন ২১টি সরকারি কম্পানির শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আনার ঘোষণা দেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার আনতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে পদত্যাগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন অর্থমন্ত্রী। ভয়াবহ ধসের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সেদিন ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি নিজের ঘোষণা থেকে সরে আসেন তিনি। ওই দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গণমাধ্যম ও তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের কারণে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়া যাচ্ছে না। তবে সরকারি শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়নি। এরপর প্রায় চার মাস কেটে গেছে। এ নিয়ে আর কোনো কথাবার্তা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন ২১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে। ফলে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের পরও লেগে যেতে পারে অনেক সময়। সে কারণে এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস), চিটাগাং ড্রাইডক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ কেব্ল্ শিল্প লিমিটেড, অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস, বাখরাবাদ গ্যাস, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস, রুরাল পাওয়ার, হোয়েকস্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন ডেভেলপমেন্ট, মিরপুর সিরামিকস এবং হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের (সোনারগাঁও হোটেল) শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
অন্যদিকে লোকসান কাটিয়ে উঠতে না পারায় আপাতত শেয়ারবাজারে আসতে পারছে না ছাতক সিমেন্ট, কর্ণফুলী পেপার মিলস, জিএম কম্পানি ও বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড।
কয়েকটি ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও আইনগত জটিলতায় আটকে আছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল্ কম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের নির্দেশক মূল্য নির্ধারণের পর পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির জন্য গত জানুয়ারিতে এই কম্পানি এসইসিতে আবেদন করে। কিন্তু শেয়ারবাজারে ধসের পরিপ্রেক্ষিতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে যায়। তাতে বিএসসিসিএলের তালিকাভুক্তি আটকে যায়।
কম্পানিটি পুঁজিবাজারে মোট তিন কোটি ১০ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের নির্দেশক মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধনের পর নতুন করে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজন হতে পারে।
ব্র্যান্ডিং নিয়ে জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার কাজ। কম্পানির মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেলটি দীর্ঘদিন 'শেরাটন' ব্র্যান্ডের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছিল। সম্প্রতি শেরাটন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনা থেকে সরে যাওয়ায় হোটেলের নাম পরিবর্তন করে 'রূপসী বাংলা' রাখা হয়েছে। তবে এখনো আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহারের চেষ্টা করছে সরকার। এ বিষয়ে সরকারি আদেশ হলেই নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও বাজারে এ কম্পানির কোনো শেয়ার ছাড়া হয়নি।
জানা গেছে, গাড়ি নির্মাণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং মোবাইল ফোন কম্পানি টেলিটকের শেয়ার ছাড়ার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। তবে এ দুটি কম্পানির চলতি অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়নি। ফলে এটাও আটকে রয়েছে। তবে পুনঃ গণপ্রস্তাবের (আরপিও) মাধ্যমে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) শেয়ার বিক্রির বিষয়টি এসইসির চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
জানা গেছে, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কম্পানি ও জালালাবাদ গ্যাস কম্পানি শেয়ারবাজারে আসার জন্য আইসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন এবং আর্থিক হিসাব বিবরণী হালনাগাদ না থাকাই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ছাড়ার কাজে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের নীতিমালা (গাইডলাইন) ঠিক করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। তবে এখন পর্যন্ত ওই নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, শুধু শেয়ার সরবরাহের জন্যই নয়, টাকা সংগ্রহ করে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য সরকারি কম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে আনা দরকার। তিনি জানান, শিগগিরই সরকারি শেয়ার বাজারে আনা হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাভুক্তির ব্যাপারে সরকারের তৎপরতার অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার জন্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট কম্পানিকে ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিতে হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া গতিশীল করতে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান প্রতিদিন একটি করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
মো. ফায়েকুজ্জামান বলেন, 'নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া গতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সামগ্রিক অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করছি। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার কাজ শুরু হয়েছে।'
ফায়েকুজ্জামান আরো বলেন, সরকারি শেয়ার ছেড়ে যদি আরো নতুন প্রতিষ্ঠান গড়া যায়, তাহলে সেটা দেশের কাজে লাগবে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার দেশের অবকাঠামো নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারবে।

News Source: Kalerkonto.com

No comments:

Latest from BPL ground