ব্যাপক দরপতনের পরদিনই ইউটার্ন শেয়ারবাজারে। রবিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক প্রায় ১৮৮ পয়েন্ট কমে ছিল। এক দিন পরই গতকাল তা ১০৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৯৬-এ। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দাম। যদিও বাজারের এ আচরণকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নিতে পারছেন সংশ্লিষ্ট কেউই। তাদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে তার খেসারত সবাইকে দিতে হবে। জানতে চাইলে আইডিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই মুহূর্তে বাজারে তারল্যপ্রবাহ এতটাই বেশি যে কোনো নিয়মের শৃঙ্খলে এটির ঊর্ধ্বমুখী রেশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদেরই বেশি সচেতন হতে হবে।'
তাঁর মতে, বাজারের বর্তমান ধারা রোধের প্রধান উপায় যেকোনো মূল্যে সরবরাহ বাড়ানো। এজন্য সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। ত্বরিতগতিতে সরকারের হাতে থাকা বিভিন্ন কম্পানির শেয়ার ছেড়ে একদিকে সরকার বাজারের স্থিতিশলিতা নিশ্চিত করতে পারে, অন্যদিকে এই বাজার থেকেই সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। পাশাপাশি দরকার বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা ও নিয়মের কঠোরতা।
এ ছাড়া গতকালের ইউটার্ন আবারও ভাবিয়ে তুলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি)। কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনে আরো কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে সোমবার ডিএসইতে লেনদেনের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম। যার প্রতিফলন ঘটতে থাকে সাধারণ মূল্যসূচকে। ফলে শেয়ারের দামের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকও। লেনদেন শুরুর প্রথম ৪০ মিনিটের মধ্যে সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৭০ পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৬২-তে। এরপর তা কিছুটা নিম্নমুখী হতে থাকে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল। এরপর আবার শুরু হয় সূচকের ঊর্ধ্বগতি, যা লেনদেনের শেষ ভাগ পর্যন্ত বজায় থাকে। দিনশেষে সূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১০৪ পয়েন্ট বেড়ে ৭৩৯৬-তে গিয়ে থামে। সাধারণ সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে সার্বিক মূল্যসূচকও। আগের দিনের চেয়ে তা ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬১৫১-তে।
গতকাল সাধারণ সূচক বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে টেলিকম খাতের একমাত্র কম্পানি গ্রামীণফোন, বীমা ও আর্থিক খাতের কম্পানিগুলো। এদিন গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ারের দাম আগের দিনের চেয়ে ৯ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ২৫৬ টাকা। ডিএসইর সূচক নির্ণায়ক হিসাবে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দামের এক টাকার তারতম্যের জন্য সূচক ৩ পয়েন্টের বেশি বাড়ে-কমে। সে হিসাবে গতকাল গ্রামীণফোনের কারণেই সাধারণ সূচক বেড়েছে প্রায় ৩০ পয়েন্ট। সেসঙ্গে আর্থিক ও বীমা খাতের কম্পানিগুলোর দর বৃদ্ধি সূচকের ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে। তবে ব্যাংকিং খাতে ছিল কিছুটা মিশ্র অবস্থা।
রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪০ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছিল মাত্র ২৫টির। আর দরপতন ঘটে ২১২ কম্পানির। সোমবার যেন তার উল্টোটিই ঘটেছে। লেনদেন হওয়া ২৪৫ কম্পানির মধ্যে ১৮৯টির দাম বাড়ে। কমেছে ৪৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল সাতটির দাম।
খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, মিশ্র অবস্থার মধ্যেও লেনদেনের দিক থেকে ডিএসইতে শীর্ষে ছিল ব্যাংকিং খাত। এদিন ঢাকার বাজারের মোট লেনদেনের ৩৭ শতাংশই জুড়ে ছিল ব্যাংক। টাকার অঙ্কে গতকাল ব্যাংকিং খাতের ৫৭৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক খাতের পরের অবস্থানে ছিল আর্থিক খাতের কম্পানিগুলো। সোমবার ডিএসইতে আর্থিক খাতের ২১ কম্পানির ২৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
ব্যাংক খাতের শেয়ারের লেনদেন বাড়ার কারণ সম্পর্কে আইডিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, 'কিছু দিনের মধ্যে ব্যাংকগুলো তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। একে সামনে রেখেই বিনিয়োগকারীরা এ খাতের প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকছে।'
সূচক ও শেয়ারের দাম বাড়লেও ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের দিনের চেয়ে বেশ কমেছে। রবিবার দরপতনের দিনেও ডিএসইতে দুই হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। আর গতকাল সেটি নেমে এসেছে এক হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের চেয়ে ৮০০ কোটি টাকা কম। লেনদেন কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা শেয়ারের হাতবদলের প্রবণতা কম থাকার কথা বলেছেন। তাদের মতে, গতকাল বাজারে ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতা ছিল কম।
No comments:
Post a Comment